বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিসত্বার ইতিহাসকে বদলে দিতে চেয়েছিল অপশক্তির ষড়যন্ত্রকারীরা,পারেনি!সত্যের মৃত্যু নেই কথাটি যে পৃথিবীর ইতিহাসে বারংবার প্রমাণিত তা বোধহয় লোলুপ দুষ্কৃতকারীরা মানতে নারাজ। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায়ের নাম ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট’।

পিতা হারানোর শোক কখনও শেষ হবার নয়। এবং কি আজকের ইতিহাসটা আরও ভালোভাবে রচিত হতে পারতো। টুঙ্গিপাড়ার সেই ছোটো খোকা বাঙালিরদের ধমনীতে মিশে আছে। সেদিনের সেই অন্ধকার এখনও পুরোপুরি কাটেনি। আমরা এগিয়েছি বহুদূর, তারপরও একটা অপূর্ণতা রয়েই গেছে। বঙ্গবন্ধু নামক ফুলটি সুবাস ছড়ানোর আগেই পরিকল্পিত এক কালবৈশাখীর ঝড়ে ঝরে পড়েছে। অথচ যার তর্জনীর ছায়া ছিলো সত্যের স্তম্ভ।যার জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামক মহাকাব্যটি রচিত হতো না।

 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জন্য এক কলঙ্কিত অধ্যায়। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটিতে সেদিন রক্তের গঙ্গা বয়ে গিয়েছিলো। সেদিন রেহাই পাননি এই মহান নেতা। রেহাই পাননি বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ কামাল,শেখ জামাল,চার বছরের শিশু শেখ রাসেল এবং অন্তঃসত্ত্বা নারী আরজুমনিসহ ২৬ জন। সে সময় শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা জার্মানিতে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান।

 

টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম ছেলেটির। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ এক নব উদিত সূর্যের মতো পৃথিবীতে আগমন। এক-পা, দু-পা করে অনেক বন্ধুর পথ হেঁটেছে খোকা। তাঁর যৌবনের বেশিরভাগ সময় উৎসর্গ করেছেন বাঙালি জাতিকে। ৪৭ এ দেশ ভাগের পর থেকেই পাকিস্তানি শাসকরা বাঙালিদের শাসন আর শোষণ করতে থাকে। পাকিস্তানি শাসকরা ভালোভাবেই জানতো, কোন জাতিকে ধ্বংস করতে হলে প্রথমে তাদের ভাষার অধিকার আগে কেড়ে নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সঠিক দিক নির্দেশনায় আমরা আমাদের মাতৃভাষাকে ফিরে পেলাম। এখান থেকেই পাকিস্তানি শাসকদের চক্ষুশূলে পরিনত হয় বঙ্গবন্ধু। জীবন আর যৌবনের সমস্ত সময়টা উজাড় করে দিয়েছিলেন বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে। বঙ্গবন্ধু ১৯৫২ সালেই বাঙালিদের বোঝাতে সচেষ্ট হন যে, বাঙালি জাতিসত্বাকে কোনদিনই মূল্যায়ন করবে না পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী।বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার প্রথম বীজ বুনন করেছিলেন ১৯৫২ সালে। যার ফলশ্রুতিতে বাঙালি পেয়েছে মাতৃভাষা বাংলা।

১৯৬৬ সালের ছয় দফা বাঙালি জাতির জন্য যেন আরেকটি স্বাধীনতার মাইলফলক। তখন পূর্ব আর পশ্চিম পাকিস্তানের মাঝে যে অর্থনৈতিক,সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রশাসনিক এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আকাশ -পাতাল বৈষম্য বিরাজ করছিলো তা বঙ্গবন্ধু সবার সামনে উন্মোচন করেন। তখনকার সময়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুকে বিছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীরা ষড়যন্ত্রের নতুন নতুন নীল নকশা তৈরি করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু সহ ৩৫ জনের নামে মিথ্যে মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলা আগরতলা মামলা নামে পরিচিত। মামলার প্রধান আসামি করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। উদ্দেশ্য ছিলো মিথ্যে মামলায় বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেয়া। কিন্তু কথায় আছে, রাখে আল্লাহ মারে কে!

১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি শাসকরা অর্থাৎ আইয়ুব খানের অনুসারীরা উন্নয়ন দশক পালন করে। অথচ পূর্ব পাকিস্তান তখনও অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে অবহেলিত। আইয়ুবের স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে সারা পাকিস্তান জুড়ে গণঅসন্তোষের গুমট বাঁধে।

সত্তরের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামীলীগের বিজয় হলেও জুলফিকার আলী ভূট্রো এবং জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তর করতে টালবাহানা শুরু করেন।

১৯৭১সালে৭ ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ,২৬মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা,১০ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার গঠন এবং ১৬ ডিসেম্বরে বাঙালি জাতির বিজয় ও স্বপ্ন পূরণের মহান কারিগর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

কিন্তু থেমে থাকেনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসররা। স্বাধীনতার কয়েকটি বছর অতিক্রম হতে না হতেই, আবার তারা জেঁকে বসে। বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা এবং তাঁর পরিবারকে হত্যার মধ্য দিয়ে দুষ্কৃতকারীরা প্রমাণ করতে চেয়েছিল,বাঙালি জাতিকেই তারা ধ্বংস করবে। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর দেহের মৃত্যু হলেও, বঙ্গবন্ধু আজও বেঁচে আছেন এবং থাকবেন সহস্র বাঙালির মনে প্রাণে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকবেন নব্য কবিদের কবিতায়!

 

লেখক- শিক্ষার্থী, মনিরুল ইসলাম মুকুল, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ,

                    বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর